Header Ads Widget

Solar power is going to be absolutely essential to meeting growing energy demands while staving off climate change

সৌর বিদ্যুৎ : সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা Solar Energy

 


ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ : বিদ্যুৎ শক্তি যেন জীবনী শক্তির মতোই; জাতির শিরা-ধমনীতে প্রবল ও সক্রিয় উপস্থিতিই তার স্বাভাবিক চলমানতাকে অক্ষুণœ রাখে, গতিময় করে। শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, স্বচ্ছন্দ ও শান্তিময় জীবন যাপন, বিনোদন সর্বক্ষেত্রেই বিদ্যুতের উপস্থিতি।

জীবন যেমন থেমে থাকে না, থেমে থাকে না উন্নয়নের উদ্যোগ-আয়োজন; সে কারণে বিদ্যুৎ ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে সব সময়। তেমনিভাবে বিকল্প শক্তির অনুসন্ধানও করতে হয়েছে। গ্যাস ও তেলশক্তির সাহায্যে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের দ্রুত যোগান নিশ্চিত করা সহজসাধ্য নয় বলেই বিকল্প বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা বেশি করে সামনে এসেছে। এই প্রয়োজন মেটাতেই সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা নিয়ে এসেছে সৌর বিদ্যুৎ।
সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় সূর্যের আলো থেকে। দিনের বেলায় সৌর শক্তিকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে সেই শক্তিই ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ হিসেবে  গৃহস্থালীর রান্না-বান্না, বাতি জ্বালানো, ফ্যান চালানো ইত্যাদি কাজে। সৌর বিদ্যুত্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে বেশ কিছু পশ্চাৎপদ এলাকা; বিশেষ করে যেখানে বিদ্যুৎ যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তেমন অনগ্রসর এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ আশা ও সম্ভাবনার স্ফুরণ ঘটিয়েছে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এখনও সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে সম্ভাবনাময়। ইতোমধ্যে এ সম্ভাবনার আভাস সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের অনেক প্রত্যন্ত গ্রাম, চর ও পাহাড়ি এলাকায় এখন রাতে সৌরবিদ্যুতে বাতি জ্বলছে। রাতে বাতি জ্বালানো ছাড়াও বৈদ্যুতিক পাখা ও টেলিভিশন চালানোর কাজে সৌরবিদ্যুৎ এসব এলাকার মানুষের মধ্যে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একের পর এক এই সুবিধা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা এলাকায়।
২০০৩ সাল থেকে দেশে নানা এলাকা ইডাকল, গ্রামীণ শক্তি, ব্র্যাক, সৃজনী প্রভৃতি কোম্পানি সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বাংলাদেশের মতো একটি সৌর আলোকিত দেশে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এখানে বছরের তিনশ’ দিনের বেশি সময় রোদ থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার খুব কম দেশে সারা বছর এত বেশি রোদ থাকে না; কিন্তু সেখানে কার্যকর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে রয়েছে নানা সুযোগ। এর খরচও মোটামুটি সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে। এসব কোম্পানির কর্মীদের খবর দিলে তারা সংশ্লিষ্ট বাড়িতে সৌরপ্যানেল স্থাপন করে দেয়। এতে লোডশেডিং-এর ঝামেলা নেই। চাহিদা অনুযায়ী সব সময়ই বৈদ্যুতিক সুবিধা পাওয়া যায়।
বর্তমানে নওগাঁ, যশোরসহ কিছু এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ চলছে। যদি পরিকল্পিতভাবে সারাদেশেই সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ করা সম্ভব হয়; তাহলে বছরে বিপুল পরিমাণ ডিজেল সাশ্রয় হবে। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এই ব্যবস্থায় কার্বন নিঃসরণ বন্ধের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা রাখা সম্ভব। কারণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব।
বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক সম্প্রসারণের পথে যেসব বাধা রয়েছে তা চিহ্নিত করা দরকার। ডিজেল বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত যে সমস্যা রয়েছে; সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনে সেসব সমস্যা নেই। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎকে আরও সুলভ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে আমাদের অধিকতর উদ্যোগী হওয়া দরকার।
বর্তমান যুগে বিদ্যুৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি। বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে একদিকে যেমন কলকারখানায় অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনেও বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে। কৃষির সেচ কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। কলকারখানায় উৎপাদনের জন্যে বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ সাধারণত, ফার্নেস ওয়েল, কয়লা, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পরমাণু প্রকল্প, বায়ুচালিত বাষ্প ও সর্বশেষ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উপাদন করা যাচ্ছে। সৌর বিদ্যুতে কোনো প্রকার খরচ নেই। সূর্যের তাপের সাহায্যে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জন্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম

Post a Comment

0 Comments